খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. মনিরুজ্জামান মন্টু বলেছেন, যুগে যুগে আমাদের এ ভূ-খন্ডে ষড়যন্ত্রকারী আর আধিপত্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পর স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি; বাংলার রাজনৈতিক আকাশের ঈশান কোণে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ভূ-লন্ঠিত হতে পারে। গণতন্ত্র নির্বাসনে যাবে। এসময়ে সবচেয়ে জরুরি দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য। আর ঐক্যবদ্ধ বিএনপি’র পক্ষে সম্ভব জনগণকে সাথে নিয়ে আধিপত্যবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দেয়া।
শনিবার (১৯ মার্চ) বেলা ১২টায় কে.ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়কদের জরুরি সভা সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় বিএনপির বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি। বিএনপি’র কতিপয় নেতাকর্মী ফ্যাসিষ্ট শক্তির পাতা ফাঁদা পা দিয়ে দলের জনসম্পৃক্ততায় বিঘ্ন সৃষ্টি এবং দলীয় শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টায় জড়িয়ে পড়ছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ; বিএনপি’র জনসম্পৃক্ততায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ব্যাপারে দল ‘জিরোটলারেন্স’।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে– বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করে ডুমুরিয়া চুকনগরের পশুরহাট সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় কয়েকজনকে শোকজ করা হবে। ৭দিনের মধ্যে জেলা বিএনপি’র দপ্তর সেলে অভিযোগের লিখিত জবাব দিতে হবে। একই সাথে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তে জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সদস্য এসএ রহমান বাবুল ও সুলতান মাহমুদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচদিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
অন্যদিকে, কয়রায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ অব্যহতিপ্রাপ্ত একজন সাবেক নেতাকে সাথে নিয়ে নেতাকর্মীদের দলীয় ও স্থানীয় কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জোর আপত্তি উঠে আসে আলোচনায়।
এসময়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- দল থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত কোনো নেতার সাথে দলীয়, স্থানীয় ও সামাজিক কোনো কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন না করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমার্থকদের কঠোর সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়কদের জরুরি সভায়ও অব্যাহতিপ্রাপ্তদের সাথে বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমার্থকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়েছিল। এরপরও কয়রাতে এঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ। শেষবারের মতো সকল উপজেলা/পৌরসভা ইউনিট প্রধানদের কাছে এ সংক্রান্ত দলীয় নির্দেশনা পৌঁছে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়রা-পাইকগাছার সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক মোল্লা খায়রুল ইসলাম ও এনামুল হক সজল এবং সদস্য জাফরী নেওয়াজ চন্দনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু আরও বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সংস্কৃতি বিএনপি’র নিজস্ব স্বত্তা; ঠিক এমনিভাবে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই বিএনপি’র লক্ষ্য। গত ১৭ বছর আন্দোলনরত সংগ্রামী বিএনপি নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই ঘরে ফিরবো। তাই ব্যক্তিগত আনুগত্য নয় বিএনপি’র অনুগত আদর্শিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াই বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমার্থকদের পবিত্র দায়িত্ব। জনগনের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রত্যেক কর্মীর মূল্যায়ন হবে; আর অনৈক্য সৃষ্টির কারণে জনসমার্থন হারালে সর্বোচ্চ পদ-পদবী পেলেও কোনো লাভ নেই। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও বিএনপি বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মন্টু।
জরুরি সভায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক এ্যাড. মোমরেজুল ইসলাম, খান জুলফিকার আলী জুলু, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, মো. তৈয়েবুর রহমান, এসএম শামীম কবির, গাজী তফসির আহমেদ, জিএম কামরুজ্জামান টুকু, অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল ও এনামুল হক সজল।
-খবর বিজ্ঞপ্তি
খুলনা গেজেট/এএজে